ডাকাতের মা সতীনাথ ভাদুড়ী
একাদশ শ্রেনী
ডাকাতের মা
ডাকাতের মা
সতীনাথ ভাদুড়ী
লেখক পরিচিতি
১৯০৬খ্রিস্টাব্দে ২৭ সেপ্টেম্বর বিহারের পূর্ণিয়া বাজারে উনার জন্ম হয়।শৈশব থেকেই সতীনাথ আপন অন্তর্মুখী তার কারণে অনেকটা নিঃসঙ্গ ছিলেন। শৈশবের শিক্ষা শুরু হয় পাবনাতেই পরবর্তীকালে মেট্রিক পাস এবং পাটনা টি সাইন্স কলেজ থেকে পাস করেন আইএসসি। বিএ অনার্স পাশ করেন অর্থনীতিতে এবং অর্থনীতিতে এমন করেন। পরবর্তীকালে পাটনা ল কলেজ থেকে ওকালতি পাশ করেন এবং আইন ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীকালে শিক্ষা বিস্তারের জন্য গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার কাজ ও আরো নানা সমাজসেবার কাজে লিপ্ত হন। হাজার 939 খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরসময় মহাত্মা গান্ধীর আহবানে সাড়া দিয়ে দেশসেবার উদ্দেশ্যে জাতীয় কংগ্রেসের যোগ দেন। ভাগলপুর জেলের দুবছর আর হাজারীবাগ জেলে থাকার সময় প্রথম তার সাহিত্য প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। রচিত হয় তার প্রথম ও শ্রেষ্ঠ উপন্যাস জাগরী।তবে সতীনাথের একটি ছোট্ট নোট বইয়ে পাসপোর্ট এর বিবরণ এ লেখা আছে তার জন্ম তারিখ ২৮/১০/১৯০৬। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস গুলি হল ঢোঁড়াই চরিত মানস, চিত্রগুপ্তের ফাইল, সত্যি ভ্রমণ কাহিনী, দিকভ্রান্ত, অচিন রাগিনী,
গল্পের উৎস ডাকাতের মা গল্পটি সংকলিত হয়েছে চকাচকি-গ্রন্থের আটটি গল্পের তৃতীয়় গল্প হিসাবে।
কাহিনী সংক্ষেপ
এককালে ডাকাতের বউ এখন সখী ডাকাতের মা নামে পরিচিত।ডাকাতের মা বলে তার ঘুম খুব পাতলা কেননা কখন দরজায় কিরকম টোকা পড়ে সেই জন্যই সে সজাগ থাকে। উনার মতে এই পৃথিবীতে বিশ্বাস করা যায় এমন লোক বড় কম। এখন সময় বদলেছে সখী জেলে গেছে পাঁচ বছর। প্রথম 21 বছর তার দলের লোকেরা তার মাকে মাসে মাসে টাকা দিত কিন্তু তিন বছর আর দেয় না। সংসারে টাকার অভাব প্রকট হয়ে ওঠে তিনি ছেলের বউকে পাঠিয়ে দেয় বাপের বাড়ি। সখির মা নিজে অন্যের বাড়িতে কাজ করে খই মুড়ি বেঁচে পেট চালানোর চেষ্টা করে। সৌখির মায়ের পরিকল্পনা আছে তার ছেলের দলের পদ লোক গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। মা গর্ব অনুভব করে ছেলের জন্য বাপের ব্যাটা সে। বুড়ো হয়েছে সখির মা। এক শীতের রাতে দরজায় টোকা দেয়ার শব্দ হয়। বুড়ির মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। সে সে আগুন তোকে দেখতে চায়। সে যখন দেখে যে তার ছেলে এসেছে তখন সে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে।
সৌখির জেল থেকে বেরোনোর সময় হয়নি এখনো। বেশ কিছুদিন আগেই সে মুক্তি পেয়েছে। ঘরে ঢুকে সে যেন কিছু খুজছে। সে মায়ের কাছে জানতে চায় তার স্ত্রী পুত্র কোথায়? বুড়ি জানায় ওরা বাপের বাড়ী গেছে। ছেলেকে দেখার জন্য জেলের মধ্যে বসে এস ছটফট করছিল। বুড়ি ছেলেকে খই মুড়ি খেতে দেয়।কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে ও ডাকাতের মায়ের ঘুম আসে না কারণ কাল সকালে সে সুখী কে কি খেতে দেবে এই ভেবে অস্থির হয়ে ওঠে। আলু চচ্চড়ি খেতে ভালোবাসে সখি কিন্তু জালালু সরষের তেল কিছুই নেই ঘরে পয়সাও নেই।হঠাৎ মনে পড়ে তার পেশকার সাহেবের বাড়ির পুড়ে যাওয়া পাঁচিল একটুখানি কাটা হয়েছে মাত্র ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে পা টিপে টিপে। বারান্দায় পেশকার সাহেবের জলভরা ঘড়ি দেখতে পেল। জল ভর্তি লোটা নিয়ে সে বেরিয়ে আসে যাতে কেউ সন্দেহ না করে।ভোরে ঘুম থেকে উঠেই পেশকার লোটা দেখতে না পেয়ে চিৎকার শুরু করে। এবং পুলিশকে খবর দেয় এবং বাজার থেকে সে কিনতে যায় দোকানদার মাতা দিনের মতামত নিয়ে পুরটা দেখায়। লোটা দেখেই তিনি চিনতে পারেন।দোকানদারের টুটি চেপে ধরতেই জানা গেল সেদিন সকালেই সৌখির মায়ের কাছে নগদ চৌদ্দ আনা দিয়ে এটি কিনেছে।
চুরির খবর শুনে দারোগা সাহেব সাইকেলে চড়ে সৌখির মায়ের ঘরে চলে আসে। সখি অনেকদিন পরে ঘরে শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিল। দারোগা পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে যায় ডাকাতের মা। কেননা ডাকাতি তাদের নিজস্ব পেশা কিন্তু সে কাল রাতে যে কাজ করেছে তা ছিচকে চোরের কাজ লজ্জাজনক কাজ।দারোগা তার কাছে জানতে চাইছে এই লোটা বাজারে বিক্রি করে এসেছে কিনা বুড়ির মাথা হেঁট করে থাকে ছেলের দিকে তাকাতে পারে না লজ্জায়। সখি ব্যাপারটা বুঝে যায় যে তার মা ঘটি চুরি করে এনেছে।মা তাকে বলতেই পার্থ কারণ জেলখানার গুদামে ডিউটি দেয়ার জন্য জেলের ঠিকাদারের কাছ থেকে সে 90 টাকা পেয়েছিল সে টাকা তার কোমরের বটুয়া আছে।দারোগা বুড়িকে চাপ দিতে থাকে মা উত্তর দিচ্ছেন না দেখেসো কি নিজেই মাকে বাঁচানোর জন্য বলে ওঠে সে কাল রাতে নিজেই এই ঘড় চুরি করে এনেছে
বুড়ি মা একেবারেই ভেঙ্গে পড়ে কারণ যে ডাকাতের নামে এলাকার লোক কাপের তার নামে ছিঁচকে চোরের কলঙ্ক লাগতে চলেছে সে নিজেই চুরি করেছে লোটা।দারোগার সঙ্গে যাওয়ার সময় সখি তার কোমরের বধুয়া রেখে গেল খাটিয়ার উপর আর সখির মা মেয়ে ছেলে কাঁদছে উনুনে ছড়ানো আলোর পোড়া গন্ধে সারা পাড়া ভরে গেছে।
সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন
সখির মা কিভাবে ডাকাতের মা হয়ে ওঠে?
সৌখির বাবার ডাকাতি করত তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীর পরিচয় তার ছেলের পরিচয়। ছেলে সখি যেহেতু তখন ডাকাত হয়ে উঠেছে তাই তার পরিচয় ঘটে গেল ডাকাতের মা হিসাবে।
ডাকাত দলের লোক এসেছে তা সখির মা বুঝবো কি করে ?
দলের লোক এসে তার দরজায় ঠকঠক করে দুবার ঢোকার পর থেমে থেমে তিনবার শব্দ করে। তাতেই সখির মা বুঝতে পারে যে কারা এসেছে l
ডাকাতের মায়ের দুনিয়ার উপর বিশ্বাস উঠে গেল কেন?
ডাকাত দলের লোকও এখন আর তাদের কর্তব্য পালন করছে না।সখির পাঁচ বছরের জন্য জেলে যাওয়ার পর প্রথম দু'বছর তারা মাসে মাসে টাকা দিয়ে যেত। এখন আর দেয়। তাই তাদের ওপর বিশ্বাস আর নেই।
সখি এর আগে কতবার জেলে গেছে এবার কতদিনের জন্য জেলে গেছে?
সখি এর আগে দু'বার। এবার জেলে গেছে সে পাঁচ বছরের জন্য।
বুড়ি তাড়াতাড়ি দশবার নিঃশ্বাস ফেলে নিয়ম রক্ষা করে নিল ---এ পদ্ধতি কার কোন নিয়ম রক্ষা হলো?
রাতে দরজা খোলা নিয়ে সখি যে নির্দেশ দিয়েছিল তা এরকম প্রকাশনার পর দশবার নিঃশ্বাস ফেলে তবে দরজা খোলা হয় যেন এই নিয়ম রক্ষার কথা বলা হয়েছে।
তার বাড়ি ফেরার আনন্দ অর্ধেক হয়ে গিয়েছে মুহুর্তের মধ্যে --কার আনন্দ কেন অর্ধেক হয়ে গিয়েছে?
উৎকোচ দিয়ে পাঁচ বছরের মেয়াদ কে কমিয়ে সখি কিছু আগে বাড়ি ফিরেছে তার ছেলে বইকে দেখার জন্য। কিন্তু যখন সে জানতে পারে যে তারা বাপের বাড়িতে আছে তার জন্য তার আনন্দ অর্ধেক হয়ে যায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন